কুড়িগ্রাম জনপদের আলোকিত জনেরা

কুড়িগ্রাম জনপদের আলোকিত জনেরা
লিখেছেন এস.এম.আব্রাহাম লিংকন
জনপদ হিসাবে কুড়িগ্রাম কবে গড়ে উঠেছে তার বিবরণ না থাকলেও এ জনপদের প্রাচীনত্ব কোন ঐতিহাসিকই অস্বীকার করতে পারেন নাই। এ জেলাকে বিবেচনা করা হয় ইতিহাসের কিংবদন্তী রানি সত্যবতী, মহারানি স্বর্ণময়ী, রানি লক্ষীপ্রিয়া কিংবা ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহী দেবী চৌধুরানি, ভবানী পাঠক, কাজী ইমদাদুল হক, সুধীর মুখার্জীর দেশ হিসাবে। এ জনপদ নানা গুণী মনীষীর শ্রম মেধা সংগ্রাম ঐতিহ্যের মিলিত অর্জন। সে সকল মনীষীদের কয়েকজনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো।
ব্রিটিশ যুগ
কাজী ইমদাদুল হক: জন্ম কুড়িগ্রাম। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃস্থানীয়। গান্ধীর স্বদেশি আদলে ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ভোগডাঙ্গা রুরাল উইভিং স্কুল। কাজী ইমদাদুল হক বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদে ৩৫ বছর প্রতিনিধিত্ব করেন। তাকে সংসদে ‘উত্তরবঙ্গের বাঘ’ বলা হতো।
বিজ্ঞানী সতিশ চন্দ দাস গুপ্ত: জন্ম কুড়িগ্রাম। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা ও বাংলার গান্ধী নামে পরিচিত। নারীমুক্তি, হরিজন উন্নয়ন, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি মাতগুড় থেকে এ্যালকোহল, রেক্ট্রিফাইড স্প্রিট এবং সালফিউরিক এসিড তৈরি করেন। অগ্নিনির্বাপক ফায়ার কিং, বর্তমানের পরিচালনযোগ্য টিউবয়েল, সাশ্রয়ী রঞ্জন পদ্ধতি, গোবরের গ্যাস প্লান্ট, বাঁশের ছিলকা দিয়ে স্বল্পমূল্যের কাগজ, দড়ি ও সুতলি তৈরীর ক্ষুদ্র মেশিন প্রভৃতি আবিষ্কার করেন।
খান বাহাদুর খৈমুদ্দিন চৌধুরী: কুড়িগ্রামের শীর্ষস্থানীয় জমিদার। ১৯১১ সালে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য ছিলেন।
সুধীর মুখার্জী: জন্ম কুড়িগ্রাম। ১৯৩৭ সালে কংগ্রেসের কুড়িগ্রাম মহুকুমা সম্পাদক এবং ১৯৪১ সালে রংপুর জেলা কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সম্পাদক ছিলেন।
মিয়া মোাহাম্মদ হাফিজ: জন্ম উলিপুর। ১৯১৮ সাল থেকে একাধিকবার বেঙ্গল এসেমব্লির সদস্য ছিলেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা এবং ১৯৫৪ সালে সংসদের চিফ হুইপ ছিলেন।
নজির হোসেন খোন্দকার : জন্ম চিলমারী। অঙ্ক শাস্ত্রে পন্ডিত ছিলেন। ১৯৪৬ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন।
ডাঃ কালিপদ বর্মণ: জন্ম উলিপুর। ছাত্রজীবনে কমিউনিস্ট রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। তিনি তেভাগা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেন।
আহাম্মদ আলী বকসী ঃ জন্ম কুড়িগ্রাম। মহুকুমা সদরে শিক্ষার অবকাঠামোগত উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। ‘৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে তার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের কন্ট্রোল রুম ছিল।
মোঃ আমান উল্যাহ : জন্ম কুড়িগ্রাম। শিক্ষক, আইনজীবী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন।
মহিউদ্দিন আহমেদ ঃ জন্ম কুড়িগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের ও উন্নয়ন সংগঠক।
কাজী মকবুল হোসেন ঃ জন্ম কুড়িগ্রাম। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে ভাওয়াইয়া গানের গীতিকার, শিল্পী ও নাট্যকার হিসাবে তিনি সুনাম অর্জন করেন।
কছিম উদ্দিন ঃ জন্ম কুড়িগ্রামের তিস্তা রতিপুর। শৈশবে গ্রামোফোন রেকর্ডে আব্বাস উদ্দিনের গান শুনে তা অবিকল সুরে গাইতে পারতেন। তিনি ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি, মুর্শিদী ও মারফতি গান লিখলেও ভাওয়াইয়া গানেই বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তাকে ভাওয়াইয়া যুবরাজ বলা হয়।
সৈয়দ শামসুল হক: জন্ম কুড়িগ্রাম। দেশের বর্তমান সময়কালের প্রধান সাহিত্যিক। কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাস সব ক্ষেত্রেই তার সেরা নৈপুণ্য। তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কারসহ বহু সম্মানে সম্মানিত। রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় তিনি সাহিত্য রচনা করে এ ভাষাকে বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত করেন।
আব্দুল হাই শিকদার: জন্ম ভূরুঙ্গামারী। কবি, লেখক ও সাংবাদিক। নজরুল ইনস্টিটিউটের সাবেক নির্বাহী পরিচালক। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন।
রেজানুর রহমান: উলিপুরে জন্ম। নাট্যকার, পরিচালক ও সাংবাদিক। আনন্দ আলো পত্রিকার সম্পাদক।
গোলাম সারওয়ার: জন্ম ফুলবাড়ী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নাট্যকার।
সুব্রত ভট্টাচার্য : জন্ম নাগেশ্বরী। শিক্ষক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও নজরুল গবেষক। বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দে র সঙ্গীত শিল্পী।
মোস্তফা তোফায়েল: জন্ম কুড়িগ্রাম। ইতিহাস অনুসন্ধানী লেখক। রংপুরের ইতিহাস ও কুড়িগ্রাম জেলার ইতিহাস ও সংস্কৃতি তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা।
আমান-উদ-দৌলা: জন্ম কুড়িগ্রাম । দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক। একজন কবি হিসেবে তিনি কুড়িগ্রামে সুনামের অধিকারী ছিলেন।
বাদল খন্দকার: রাজারহাটে জন্ম। চলচ্চিত্র পরিচালক।
রেয়াজ উদ্দিন আহমেদ (ভোলা মিয়া) : জন্ম কুড়িগ্রাম। ১৯৭০-এ এমএনএ নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধে ছয় নম্বর সেক্টরে রাজনৈতিক দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেন। ১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ১৯৯১ সালে সাংসদ এবং চারবার মন্ত্রিসভায় সদস্য ছিলেন। স্পিকার হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।
মজাহার চৌধুরী: ১৯৭০ এর নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
শামসুল হক চৌধুরী : জন্ম ভুরুঙ্গামারী। তিনি ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ক্রীড়া ও সাহিত্য সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক। ১৯৭০ সালে এম.পি.এ এবং ১৯৭৩ ও ১৯৭৯ সালে এমপি নির্বাচিত হন।
আহমদ হোসেন সরকার: জন্ম রাজারহাট। মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে কুড়িগ্রামের অন্যতম প্রধান সংগঠক ছিলেন।
অধ্যাপক হায়দার আলী: মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। শিক্ষাবিদ।
সাদাকাত হোসেন ছক্কু মিয়া : জন্ম চিলমারী। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৭০ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ সদস্য ছিলেন।
কানাই লাল সরকার: ১৯৭০ এর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
আব্দুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী: জন্ম রাজারহাট। ১৯৭০-এ প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য। শিক্ষক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
নুরুল ইসলাম পাপু মিয়া: জন্ম রৌমারী। ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় এবং আগস্ট ‘৭১-এ রৌমারীর বেসামরিক প্রশাসন চালু এবং রৌমারী মুক্তাঞ্চল গঠনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
আব্দুল হাকিম : জন্ম নাগেশ্বরীর হাসনাবাদ। ১৯৭০-এর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তাছাদ্দুক হোসেন ঃ জন্ম কুড়িগ্রাম। ১৯৭১ সালে কুড়িগ্রাম মহকুমা সংগ্রাম কমিটির একজন সংগঠক ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে জাসদের কেন্দ ীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন।
সিরাজুল ইসলাম টুকু : জন্ম কুড়িগ্রাম। ৬ নং সেক্টরের অধীন প্রথমে কুড়িগ্রামে পরে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে যুদ্ধ করেন।
ফুলু সরকার: জন্ম কুড়িগ্রাম। কেন্দ ীয় যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, শ্রমিক নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা।
এস.এম হারুন অর রশীদ লাল: জন্ম কুড়িগ্রাম। একজন মুক্তিযোদ্ধা। কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ছিলেন।
পানাউল্লাহ আহমেদ: জন্ম কুড়িগ্রাম। তিনি ১৯২৭ সালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে যোগ দেন। উত্তরবঙ্গের তিনি প্রথম মুসলিম ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। ১৯৪৭-এর পর যে ক’জন বাঙালি পূর্ব পাকিস্তানকে উন্নয়নের ধারায় সংযুক্ত করতে চেয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিলেন তিনি।
মেজর জেনারেল (অব) আমসাআ আমিন: জন্ম উলিপুর।’৭১-এ সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। যুদ্ধের সময় পাকিস্তান থেকে বিমান নিয়ে পালানোর সময় বন্দী হন। সেখান থেকে পালিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন।
মেজর জেনারেল আহসান নজমুল আমিন: জন্ম উলিপুর। সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সিজিএস ছিলেন। রাষ্ট্রদূত হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।
ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ আলী মন্ডল: জন্ম রাজারহাট: মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসাবে অবসর নেন। ডিজিএফআইয়ের পরিচালক ছিলেন।
মেজর (অব:) আব্দুস সালাম : জন্ম কুড়িগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। স্বাধীনতা উত্তর সেনাবাহিনী গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
লেঃ কর্নেল সবুর মন্ডল: জন্ম রৌমারী। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস করে ১৯৬৫ সালে ক্যাপ্টেন হিসাবে সেনাজীবন গ্রহণ করেন।
রাষ্ট্রদূত মেজর আশরাফ-উদ-দৌলা তাজ: জন্ম চিলমারী। প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ও সচিব, মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনীর মেজর হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন।
শহীদ কর্নেল আফতাবুল হোসেন: বিডিআরের রংপুর সেক্টরে কমান্ডার ছিলেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি/০৯ পিলখানায় শহীদ হন।
লে: কর্নেল আমিনুল ইসলাম: জন্ম রাজারহাট। কুড়িগ্রাম বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
মোহাম্মদ শামসুল হক: জন্ম কুড়িগ্রাম। সরকারের অতিরিক্ত সচিব হিসাবে অবসর নেন। রাষ্ট্রের পক্ষে শিক্ষা ও ক্রীড়ায় অনেক অবদান রাখেন।
মোহাম্মদ আবু হাফিজ : জন্ম রৌমারী। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলার ডিসি এবং সরকারের সচিব ছিলেন। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের কমিশনার।
গোলাম হাবিব দুলাল: জন্ম চিলমারী। বন বিভাগের চিফ কনজারভেটর ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর রাজনীতিতে প্রবেশ করে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মাহফুজুর রহমান: জন্ম রাজারহাট। বর্তমানে সচিব হিসাবে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে কর্মরত।
বিচারপতি এটিএম সাইফুর রহমান লিটন: উলিপুরের সন্তান। বিলেত থেকে বার এট ল করেন। এর আগে রংপুর ও কুড়িগ্রামে আইন পেশায় যুক্ত ছিলেন। তিনি কুড়িগ্রামের প্রথম নাগরিক যিনি বিচারপতির পদ অলঙ্কৃত করেছেন।
বিচারপতি আলতাফ হোসেন: জন্ম ভুরুঙ্গামারী : বিলেত থেকে বার এট ল করেন। ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ছিলেন। ভারত উপমহাদেশে তিনি কনিষ্ঠ বিচারপতি।
আবু বক্কর: জন্ম রৌমারী। জেলা জজ, সলিসিটর ও আইন সচিব ছিলেন। মেইন স্ট্রিম ল জার্নাল এর প্রতিষ্ঠাতা।
এছাড়াও যারা জজ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন- আবুল হোসেন ব্যাপারি, মোজাম্মেল হোসেন, মুনীর হোসেন, সামসুল হক, মাহবুবুর রহমান, আব্দুর রহিম।
এড.আবু জাফর মোঃ আসাদ: জন্ম তিস্তা। ভাষা সংগ্রামে সংশ্লিষ্টতা ছিল। বৃহত্তর রংপুরের প্রখ্যাত আইনজীবী।
এড. নজির হোসেন সরকার: জন্ম ফুলবাড়ী। প্রগতিশীল রাজনীতিক, সফল আইনজীবী, জেলা বার সমিতি, জেলা ন্যাপ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
এড.কে এস আলী আহমেদ: জন্ম কুড়িগ্রাম। জেলা বারের একাধিকবারের সভাপতি। সাহিত্যনুরাগী এ আইনজীবী সিভিল আইনে সুনামের অধিকারী।
এড.এটিএম এনামুল হক চৌধুরী চাঁদ: জন্ম কুড়িগ্রাম। জেলা গণফোরাম সভাপতি।
এড. আব্দুল করিম: জাকের পার্টির জেলা সভাপতি. একজন সাহিত্যিক।
এড. ইদ্রিস আলী: পাবলিক প্রসিকিউটর ও জেলা বারের সভাপতি ছিলেন। জাতীয় পার্টি ও জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন।
একেএম মাঈদুল ইসলাম: রাজনীতিবিদ ও শিল্পপতি। জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকারের সময়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন। কাশেম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ-এর এমডি। এলাকার উন্নয়নসহ কুড়িগ্রামের ডায়াবেটিক হাসপাতাল, মরিয়ম চক্ষু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় তার অবদান রয়েছে।
তাজুল ইসলাম চৌধুরী : জন্ম কুড়িগ্রাম। ন্যাপ ভাসানী দিয়ে রাজনীতি শুরু। জিয়াউর রহমান ও এরশাদের মন্ীিসভার সদস্য ছিলেন। সংসদে তিনি ৬ বার কুড়িগ্রাম সদর আসন থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন।
আমিনুল ইসলাম মন্ডল মঞ্জু : ঊনসত্তুরে ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের নেতা। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র যুবকদের সংগঠিত করেন। দেশ স্বাধীনের পর কিছুকাল স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। পরে জাতীয় রাজনীতিতে যোগ দেন। বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
মোঃ জাফর আলী : জন্ম কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ীতে। বর্তমানে তিনি কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
আ.খ.ম শহীদুল ইসলাম বাচ্চু: কুড়িগ্রাম-১ আসনে একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।
একেএম মোস্তাফিজুর রহমান: বর্তমান কুড়িগ্রাম-১ আসনের সাংসদ। তিনি পর পর তিনবার জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
রুহুল কবির রিজভী: ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ ীয় সভাপতি ছিলেন। তিনি বর্তমানে বিএনপির প্রভাবশালী যুগ্ম সম্পাদক।
একেএম তাসভির-উল ইসলাম: রাজনীতিবিদ ও শিল্পপতি। কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি। কাশেম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ-এর অন্যতম কর্ণধার।
গোলাম মোস্তফা : জন্ম নাগেশ্বরী। রাজনীতিবিদ ও শিল্প উদ্যোক্তা। দেশবন্ধু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর মালিক। জাতীয় পত্রিকা আজকালের খবর-এর মালিক ও প্রকাশক।
সাইফুর রহমান রানা: জাসদ ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতির হাতেখড়ি। পরে ছাত্রদল ও যুবদল শেষে বর্তমান কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
শাহাদত হোসেন : জন্ম চিলমারী। আইয়ুব বিরোধী ও হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন।
ফিরোজ মোঃ ফারুক : জন্ম চিলমারী। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক।
শুভ্রাংশু চক্রবর্তী: জন্ম রাজারহাট। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক , ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি ছিলেন।
জাহেদুল হক মিলু: জন্ম নাগেশ্বরী। বর্তমানে বাসদ খালেকুজ্জামানের কেন্দ ীয় নেতা।
মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন তালুকদার: জন্ম উলিপুরে। ১৯৯১ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আজিজুল হক সরকার : জন্ম রৌমারী। মুক্তিযুদ্ধের সফল সংগঠক। ‘৭১ সালে রৌমারী রণাঙ্গন থেকে তিনি ‘অগ্রদূত’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।
মোঃ গোলাম হোসেন: জন্ম রৌমারী। মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ছলিম উদ্দিন আহমেদ : জন্ম রৌমারী। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। তিনি রাজিবপুর উপজেলা পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
শহীদ রাউফুন বসুনিয়া: জন্ম রাজারহাট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা ছিলেন। জাতীয় ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি। স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা ছাত্র আন্দোলনের অপরাধে তাকে ১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয়।
এছাড়াও যারা শিল্প ও বাণিজ্যে অবদান রাখছেন তারা হলেন- অরূপ দত্ত, আব্দুল আউয়াল মনু, আনোয়ারুল গনি চাঁদ, আবুল কাশেম চাঁদ, পনির উদ্দিন আহমেদ, জহুরুল হক দুলাল, লুত্ফর রহমান বকসী, আব্দুস সাবের, নিতাই সাহা, ফণিন্দ মোহন সাহা, জগদীশ প্রসাদ আগরওয়াল, অনুপ কুমার বিশ্বাস, নজরুল ইসলাম, এস.এম.ওমর ফারুক, জিল্লুর রহমান টিটু, খায়রুল ইসলাম,পদম চাঁদ মাড়োয়ারী প্রমুখ।
ডাঃ সৈয়দ সিদ্দিক হোসেন: ১৯২১ সালে কলকাতা থেকে কুড়িগ্রামে এসে চিকিত্সা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার জন্য হোমিওপ্যাথ কলেজ দি রইছি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রফেসর ডাঃ হামিদুল হক খন্দকার: জন্ম ১৯৫৫ ফুলবাড়ী। মুক্তিযোদ্ধা, দিনাজপুর মেডি ক্যালজের অধ্যক্ষ। দেশের অন্যতম সেরা অর্থপেডিক্স সার্জন।
প্রফেসর ডাঃ আক্কাস আলী সরকার : জন্ম উলিপুর : সরকারি চাকরি ছেড়ে বেসরকারি উদ্যোগে স্ত্রী ডাঃ শাহিনাকে নিয়ে গড়ে তোলেন প্রাইম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। এছাড়াও নার্স ট্রেনিং কলেজ, মেডিক্যাল টেকনিক্যাল পার্সন তৈরির প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন তিনি। আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং শল্য চিকিত্সায় সুনামের অধিকারী।
ডা: শাহাদত্ হোসেন: জন্ম কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী। পরিচালক (স্বাস্থ্য বিভাগ) রংপুর।
শহীদ অধ্যাপক আব্দুর রহমান: কারমাইকেল কলেজের শিক্ষক।
শহীদ অধ্যাপক ওহাব: কুড়িগ্রাম কলেজের শিক্ষক। সম্মুখ সমরে শিংঝাড়ে শহীদ হন।
অধ্যাপক ড.হোসেন আলী : জন্ম কুড়িগ্রাম। প্রকেশৗল বিশ্বদ্যািলয়ের শিক্ষক। বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতিও ছিলেন।
অধ্যাপক ড.রেজাউল হক: জন্ম চিলমারী। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন।
অধ্যাপক মোঃ মোজাম্মেল হক: জন্ম ১৯৪৯ সাল। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার।
অনীল চন্দ ভাদোড় : জন্ম রাজারহাট। পঞ্জিকা বিশারদ, বৈয়াকরণিক, শিক্ষাবিদ একজন পন্ডিত মানুষ।
মোহাম্মদ শামসুল হক: জন্ম কুড়িগ্রাম। শিক্ষক, অনুবাদক ও একাধিক গ্রন্থ প্রণেতা। তিনি লন্ডনস্থ আন্তর্জাতিক বাঙালি সংগঠনের সভাপতি।
আব্দুল হামিদ : জন্ম কুড়িগ্রাম। ভাসানীর অনুসারী। আদর্শ শিক্ষক, শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংবাদিকতা ও সাহিত্য চর্চা করতেন।
তোফায়েল হোসেন: জন্ম কুড়িগ্রাম। ইত্তেফাকের আমৃত্যু কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ছিলেন। প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন। তার উদ্যোগে প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ কে এম সামিউল হক নান্টু: কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও স্কাউট ব্যক্তিত্ব।
তহমিনা খান ডলি: জন্ম কুড়িগ্রামে। বাংলাদেশের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রদূত। ১৯৭৯ সালে তিনি শ্রীলংকা ও মালদ্বীপের হাই কমিশনার নিযুক্ত হন।
হামিদা সরকার : জন্ম কুড়িগ্রাম। নারী সংগঠক ও লেখিকা। প্রকাশিত গ্রন্থ ‘আলোর পথে,’ ‘অগ্নিগিরি’ । তার সম্পাদনায় ‘জননী’ নামক একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। কচিকাঁচার মেলা, মকুল ফৌজ, জাগরণী মহিলা সমিতি, অভিযাত্রিকসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন।
অধ্যাপক শামসুন নাহার চৌধুরী সানু: জন্ম কুড়িগ্রাম। তিনি সরকারি কলেজে অধ্যাপনায় নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
তছলিমা বেগম খুকি: কুড়িগ্রামের বধূ। কলকাতা বেথুন কলেজে পড়বার সময় অনুশীলন পার্টির সাথে যোগাযোগ ছিল। উলিপুরে নারী আন্দোলনে তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন।
নূর-ই-হাসনা চৌধুরী লিলি: নারী নেত্রী ও জাতীয় সংসদ সদস্য।
আহমেদ নাজমীন সুলতানা: নারী নেত্রী ও জাতীয় সংসদ সদস্য।
শাহনাজ সরদার: সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য।
এছাড়াও জেলায় যারা নারী সংগ্রাম ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন তারা হচ্ছেন- বরোদা রায় সুন্দরী, আছিয়া মণ্ডল, অনিলা নন্দি, মিনা হোসেন, রওশন আরা চৌধুরী, খোদেজা বেগম, শিরিনা বেগম, নন্দিতা চক্রবর্তী, অধ্যক্ষ নাছিমা বানু, খুরশিদা বেগম লিলি, রেবা হোসেন সরকার, সখিনা বেগম লিলা, শামীমা আখতার জেমিন, লা্ইলী বেগম, জয়নব আক্তার বাশী, পারুল দে, বীথি চৌধুরী, এডভোকেট রেহেনা খানম, প্রতিমা রায় চৌধুরী, নাজমুন নাহার সুইটি, মতি শিউলী রায়, কল্পনা বেগম (রাজারহাট), রেজিয়া বেগম (রৌমারী) প্রমুখ।
কুড়িগ্রামের গুণীদের নিয়ে সংগ্রহধর্মী লেখাটি তৈরি করেছেন এস.এম.আব্রাহাম লিংকন। তিনি একজন রাজনীতিক ও আইনজীবী। নব্বইয়ের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম ছাত্রনেতা, রাকসুর এজিএস এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটর ছিলেন। বর্তমানে তিনি কুড়িগ্রাম আইন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ হিসাবে কর্মরত।
সুত্র: ইত্তেফাক