কুড়িগ্রাম জেলার ইতিহাস

বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রাম। এ জেলার পূর্বদিকে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা রাজ্য ও জামালপুর জেলা, উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার, জলপাইগুঁড়ি ও আসাম রাজ্য, পশ্চিমে লালমনিরহাট, রংপুর জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং দক্ষিণে গাইবান্ধা ও জামালপুর জেলা। উত্তর জনপদের কুড়িগ্রাম জেলা অতি প্রাচীন প্রাগৈতিহাসিক আদিম সভ্যতার ইতিহাস, ঐতিহ্য আর স্বকীয়তার বৈশিষ্ট্যে ভরপুর।


 ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমোরসহ ১৬টি নদ-নদী বিধৌত জেলা কুড়িগ্রাম। সুদীর্ঘ সময়ের ভাঙ্গাগড়া, জয়-পরাজয়, আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠেছে এ জনপদ এবং মানুষের জীবনধারা। নদ-নদী জনপদের সবকিছু গ্রাস করেনি, দেশি-বিদেশি শাসন-শোষণের কবলে পড়ে নিষ্পেষিত ও বিপর্যস্ত হয়েছে এই এলাকার মানুষগুলো। এতোকিছুর পরও থেমে থাকেনি এ জনপদের এগিয়ে চলা, এগিয়ে চলছে প্রতিনিয়ত লড়াই করে। আদিম যুগ থেকে এ জেলার অধিবাসীরা ঐতিহাসিক সকল ঘটনাবর্তের সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে রাজনৈতিক, সামাজিক, উন্নয়ন, বিপ্লবাত্মক, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার গৌরবদীপ্ত ভূমিকায় অবতীর্ণ থেকে তৈরি করেছে উত্তর জনপদের বৈচিত্র্যময় ইতিহাস। প্রাগৈতিহাসিক আদিম সভ্যতার লীলাভূমি অতি প্রাচীন এই জনপদের ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা উপত্যকায় আদিম মানুষের প্রথম আর্বিভাব ঘটেছিল। কুড়িগ্রাম জনপদ হিসেবে গড়ে ওঠার প্রকৃত সময় নিরূপণ করা না গেলেও অতি প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রমাণ ও নিদর্শন পাওয়া যায়। সুদীর্ঘ সময় পূর্বে কুড়িগ্রাম ‘কয়েরগঞ্জ’ বা ‘কুড়িগঞ্জ’ নামে পরিচিত ছিল। ‘কুড়ি’ শব্দটি অতিপ্রাচীন অনার্য জনগোষ্ঠীর বাণিজ্যিক পণ্য গণনার একক ছিলো। প্রমাণ আছে যে, আর্য সম্প্রদায় এ অঞ্চলে আসার পূর্বে অনার্যদের বসবাস ছিলো। নিগ্রো দ্রাবিড়-মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর মিলিত রক্তধারার মিশ্রণে যে প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছে, যা অনার্য সভ্যতা বলে ইতিহাসে স্বীকৃত। প্রাচীন এ অঞ্চলের মানুষের চেহারা আকৃতি, রক্তে, ভাষায়, আচার-আচারণে প্রাগৈতিহাসিক জনগোষ্ঠীর ছাপ বিদ্যমান ও এর বৈশিষ্ট্য আজো অপরিবর্তিত। ১৭৬৫ সালে সম্রাট শাহ আলমের ফরমান মতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানী লাভ করে। এসময় বাহারবন্দ ও ভিতরবন্দ রংপুর ফৌজদারীর অধীনে ছিলো। ১৮৫৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে রাজত্ব চলে গেলে ব্রিটিশ সরকার ১৮৭৫ সালে ২২ মে (কারো মতে ২২ এপ্রিল) উলিপুর, চিলমারী, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী ও কুড়িগ্রাম থানা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করে কুড়িগ্রাম মহকুমা। ১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় কুড়িগ্রাম জেলা (২৩ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ হয়)। সুত্র: ইত্তেফাক

1 comments:

খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন। ধন্যবাদ রাইটারকে।