কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ মিনারের ইতিহাস

কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ মিনারের ইতিহাস ৷
এ আর মিলু ৷
কালের অতল গহবরে হারিয়ে যায় ইতিহাসের স্বর্নজ্জ্বল কোন ঘটনা কখনোবা ইতিহাস বিকৃতিকারীদের কালো থাবায় অজানাই থেকে যায় বিরত্বগাথা। নানা ঘাত- প্রতিঘাত সহ্য করে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ মিনার। কুড়িগ্রাম পুরাতন
শহরের মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রবেশ গেটের সামনে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে ভাষা আন্দোলনের এই স্মারক চিহৃটি।
কুড়িগ্রামের এক সময়ের কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারটি নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক ভোগান্তি হয়েছে উদ্যোক্তাদের। পুলিশ শহীদ মিনারটি ভেঙে দিয়েছে রাতের আঁধারে, মিছিলে হামলা চালিয়ে গ্রেফতার করছে ভাষা সৈনিকদের। এমন অনেক তথ্যই এখন নতুন প্রজন্মের অজানা।
কুড়িগ্রামের ভাষা সৈনিকদের অন্যতম প্রবীণ সাংবাদিক ও স্কাউট ব্যক্তিত্ব একেএম সামিউল হক নান্টু জানান, ’৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারী ঢাকায় পুলিশের গুলিতে কয়েকজন নিহত হবার খবর পেয়ে ডা. আব্দুর নুর, মোস্তফা বিন খন্দকার, ডা. আসাদসহ কয়েকজন স্কুল ছাত্র পরদিন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুল ও মাইরন স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শহরে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি মুসলিমলীগ নেতা পনির উদ্দিন আহমেদের বাড়ির সামনে গেলে তার নির্দেশে পুলিশ মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে কুড়িগ্রাম ১ নম্বর মাঠের স্কুলে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা আহবান করা হলে সেখানেও পুলিশ বাঁধা দেয়। এভাবেই প্রথম ভাষা দিবস পালিত হয় কুড়িগ্রামে।
তবে তখন অব্দি কোন শহীদ মিনার ছিল না কুড়িগ্রামে। ‘৫৩ সালে শহীদ দিবসের আগে এ্যাডভোকেট আমান উল্লাহ, সাংবাদিক তোফায়েল হোসেন, সামিউল হক নান্টু, আব্দুল আহাদ, মকবুল হোসেন খান, আব্দুল হামিদ, এ্যাডভোকেট আসাদসহ কয়েকজন মিলে কুড়িগ্রাম গওহর পার্ক মাঠে (এখন মজিদা আদর্শ মহাবিদ্যালয় মাঠ) একটি শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ব্যবসায়ী আনছার মিয়ার কাছে ইট ও বিভিন্ন জনের কাছে চাঁদা তুলে তড়িঘড়ি করে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়, যাতে ২১ ফেব্রূয়ারী এই শহীদ মিনারে উদ্যাপন করা যায়। কিন্তু রাতের আঁধারে পুলিশ শহীদ মিনারটি ভেঙে দেয়। এতে উদ্যোক্তারা হতাশ ও হতদ্যম না হয়ে আবার ২০ ফেব্রূয়ারী রাতে শহীদ মিনারটি পুণরায় নির্মাণ করা হয়। পরদিন ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় কুড়িগ্রামের পৃথম শহীদ মিনারটি। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশার শত শত মানুষ শ্রদ্ধা জানান শহীদ মিনারে।
তবে এ যাত্রাও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। শহীদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত র‌্যালীটি মুসলিমলীগ নেতা পনির উদ্দিনের বাড়ি অতিক্রমকালে তাকে জুতা খুলতে বললে তিনি অকথ্য গালিগালাজ করে ৷ পুলিশকে মিছিল ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দেন। কিছুণ পর পুলিশ মিছিলে হামলা চালিয়ে বাদল রুদ্র নামে এক কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৩ দিন পর তিনি ছাড়া পান।
এরপর থেকে এই শহীদ মিনারটি ছিল কুড়িগ্রামের কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার। পরে ১৯৮৬-৮৭ সালে কুড়িগ্রাম শহরের ঘোষপাড়ায় বর্তমান সুদৃশ্য শহীদ মিনারটি নির্মাণের পর তা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রুপ নেয়। তা সত্বেও কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ মিনারের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও মহীমা আজও রয়েছে অম্লান।