মুক্তিযুদ্ধ এবং কুড়িগ্রাম

মুক্তিযুদ্ধ এবং কুড়িগ্রাম
ফজলে ইলাহী স্বপন,
ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমোরসহ ১৬টি নদ-নদী দ্বারা বেষ্টিত সর্ব উত্তরের হিমালয় পাদদেশীয় জেলা কুড়িগ্রাম। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে কুড়িগ্রামের রয়েছে এক বিশাল গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। একাত্তর সালে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ বীরদর্পে দীর্ঘ ২৩০ দিন ধরে পাক বাহিনীর সাথে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও এদেশীয় রাজাকারদেরকে পরাজিত করে হানাদারমুক্ত করে অবরুদ্ধ কুড়িগ্রামকে। মুক্তিযুদ্ধের সেই গৌরবময় ইতিহাসে কুড়িগ্রামের মুক্তিযুদ্ধও একটি বীরত্বপুর্ণ অধ্যায় হয়ে নক্ষত্রের মতো দ্যুতি ছড়াচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা রয়েছে ৯৯ জন। আর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৩ হাজার ২৩ জন। খেতাবপ্রাপ্ত’র তালিকায় রয়েছেন- ১ জন বীরউত্তম, ২ জন বীরবিক্রম ও একজন নারীসহ ৪ জন বীরপ্রতীক।
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবরণ :
কুড়িগ্রাম জেলায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৯৯ জন। আর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৩ হাজার ২৩ জন।
কোম্পানি কমান্ডারদের বিবরণ :
যুদ্ধকালীন সময়ে এতদঞ্চলে কোম্পানি কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল কুদ্দুস নান্নু, রওশন বারী রঞ্জু, আব্দুল হাই সরকার, কেএম আকরাম হোসেন, সুবেদার মেজর আরব আলী, সুবেদার বোরহান উদ্দিন, সুবেদার মাজহারুল হক, সুবেদার আব্দুল ওয়াহাব, সুবেদার আলতাফ, বদরুজ্জামান, শওকত আলী ও আবুল কাশেম চাঁদ।
খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা :
মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য খেতাবপ্রাপ্ত হয়েছেন লেঃ আবু মঈন মোঃ আসফাকুস সামাদ বীর উত্তম (মরণোত্তর), শওকত আলী (বীর বিক্রম), সৈয়দ মনছুর আলী টুংকু (বীর বিক্রম), বদরুজ্জামান (বীর প্রতীক), আব্দুল হাই সরকার (বীর প্রতীক), আব্দুল আজিজ (বীর প্রতীক) এবং একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি (বীর প্রতীক)।
ভৌগোলিক ও প্রশাসনিক অবস্থান :
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ৮টি থানা নিয়ে কুড়িগ্রাম একটি মহকুমা হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু ও সংঘটিত ঘটনাবলী :
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়ে পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠীর শোষণ, নির্যাতন ও বঞ্চনায় নিষ্পেষিত মানুষ খুঁজতে থাকে মুক্তির পথ। পর্যায়ক্রমে প্রতিবাদ, আন্দোলন আর গণঅভ্যুত্থানের পর মুক্তিযুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো বাঙালি জাতিকে। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক সাধারণ নির্বাচনে তত্কালীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এসময় কুড়িগ্রামে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জাতীয় পরিষদে তিনটি এবং প্রাদেশিক পরিষদে পাঁচটি আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ক্ষমতা হস্তান্তরে ষড়যন্ত্র আর টালবাহানা শুরু হলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা পূর্ব পাকিস্তান।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর তা ৮ই মার্চ বেতারের মাধ্যমে প্রচারের পর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে কুড়িগ্রামবাসী। ৯ মার্চ অত্র এলাকার সর্বস্তরের মানুষ কুড়িগ্রাম পুরাতন ডাকঘরের লিচুতলায় একটি জনসভায় মিলিত হয় এবং ১০ মার্চ জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রয়াত আহম্মদ হোসেন সরকার ও আহাম্মদ আলী বকসীকে যুগ্ম আহবায়ক করে মহুকুমা সংগ্রাম কমিটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। সে দিন থেকেই তাদের নেতৃত্বে কুড়িগ্রামের মুক্তিকামী মানুষ যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে।
১৭ মার্চ স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতারা যৌথ উদ্যোগে কুড়িগ্রামের সবুজপাড়াস্থ চিলড্রেন পার্কে তত্কালীন ডিএসবি দারোগার ছেলে তুষার নামের একটি শিশুকে দিয়ে প্রথম বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন- তত্কালীন ছাত্রনেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, আমিনুল ইসলাম, রওশন বারী, রুকুনুদ্দৌলা মন্ডল প্রমুখ।
১৮ মার্চ তত্কালীন মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ের উড্ডীয়মান পাকিস্তানি পতাকা পোড়াতে গিয়ে গ্রেফতার হন- সৈয়দ মনসুর আলী টুংকু, জোবেদ আলী সরকার, আব্বাস আলী, সুজাম ও খোকন ঘোষ। ২৩ মার্চ তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সারাদেশের মতো কুড়িগ্রাম মহুকুমার সকল অফিস-আদালত ও বাসভবনে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেসময় কুড়িগ্রাম মহুকুমা প্রশাসক মামুনুর রশীদ (সিএসপি), দ্বিতীয় কর্মকর্তা আব্দুল হালীম ও তৃতীয় কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
২৫ মার্চ মধ্যরাতে হানাদার বাহিনী বাঙালির উপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ শুরুর তিনদিন পর ২৮ মার্চ কুড়িগ্রাম সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে স্থানীয় গওহর পার্ক মাঠে এক বিশাল জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখান থেকেই আহাম্মদ আলী বকসী, অধ্যাপক হায়দার আলী, তাছাদ্দুক হোসেন, আমিনুল ইসলাম মন্ডল, আক্তারুজ্জামান মন্ডল, রওশনুল বারী, প্রফেসর হায়দার আলী, মৃত আব্দুস সামাদ, মৃত এটিএম আফজাল হোসেন দুলাল, মহিউদ্দিন আহাম্মদকে নিয়ে একটি বেসরকারি হাই কমান্ড গঠন করা হয়। তাদেরই নির্দেশে বিভিন্ন থানা থেকে গোলাবারুদ, অস্ত্র সংগ্রহ করে প্রথমে পুলিশ, আনসার ও ছাত্রদের মধ্যে বিতরণ করে কুড়িগ্রাম অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়।
৩০ মার্চ রংপুরের ইপিআর উইং-এর সহকর্মী অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নওয়াজেস উদ্দিন কুড়িগ্রামে আসেন। তার নির্দেশেই রংপুরের ইপিআর উইং-এর অধীনস্থ অধিনায়ক নায়েক সুবেদার বোরহান উদ্দিন তাদের সহযোদ্ধা ইপিআরদের নিয়ে কুড়িগ্রামে আসেন এবং অবস্থান নেন।
৩১ মার্চ কুড়িগ্রামে সমবেত হয়ে এখানকার স্থানীয় পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ, ছাত্র-জনতা এবং ইপিআরদের নিয়ে একটি সম্মিলিত বাহিনী গড়ে তোলা হয়। সেসময় আহম্মদ আলী বকসীর গোডাউনকে কন্ট্রোলরুম করে টোগরাইহাটের আওয়ামী লীগ নেতা আহম্মদ হোসেন সরকারের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের হেড কোয়ার্টার স্থাপন করা হয়। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর সুবেদার আলতাফ ১৭ জন সহযোদ্ধাকে নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে রৌমারীর যাদুর চরে অবস্থান নিয়ে স্থানীয় যুবকদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধের কলাকৌশল শেখাতে থাকেন।
১ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ ঠেকাতে তিস্তা ব্রীজের পূর্ব পাড়ে মুক্তিযোদ্ধারা একটি শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তোলেন। পরদিন ৩রা এপ্রিল সেখান থেকেই পাক হানাদার বাহিনীর সাথে তিস্তা নদীর কাউনিয়া অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে।
৪ এপ্রিল পাকবাহিনী হারাগাছ দিয়ে তিস্তা নদী পার হয়ে লালমনিরহাটে অবস্থান নিলে মুক্তিযোদ্ধারা তিস্তা নদীর পূর্ব পাড়ের ঘাঁটি কুড়িগ্রামে এসে অবস্থান নেয়।
৫ এপ্রিল কুড়িগ্রাম চিলড্রেন পার্কেও জনসভায় মুক্তিযোদ্ধারা সাধারণ মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাবার আহ্বান জানালে শহর জনশূন্য হয়ে পড়ে। এদিনই মুক্তিযোদ্ধাদের হেডকোর্য়াটার নাগেশ্বরীতে সরিয়ে নেয়া হয়।
৭ এপ্রিল পাকবাহিনী সাঁজোয়া বহর নিয়ে লালমনিরহাট ও রংপুর থেকে একযোগে গুলিবর্ষণ করতে করতে কুড়িগ্রাম শহরের দিকে এগুতে থাকে। বিকেলের দিকে পাকবাহিনী কুড়িগ্রাম শহরে প্রবেশ করে বর্তমান সার্কিট হাউজের সামনে পজিশন নিয়ে গোলাবর্ষণ শুরু করে। এসময় কুড়িগ্রাম জেলখানার কর্তব্যরত ইনচার্জ ও ৫ জন সিপাহীকে পাকবাহিনী বর্তমান সার্কিট হাউজের সামনের রাস্তায় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। সেখানেই শহীদ হন- লাল মোহাম্মদ, আনসার আলী, সাজ্জাদ আলী ও জহির উদ্দিন। গুরুতর আহত জেল ইনচার্জ শেখ হেদায়েত উল্লাহ রাত ১১টার দিকে মারা যান। বাকি একজন সিপাহী আব্দুল জলিল গুরুতর আহত হলেও পরে তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ৭ এপ্রিল পাকবাহিনীর হাতে নিহত জেল ইনচার্জসহ ৪ সিপাহীই মূলত কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ। পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে ঐদিনই কুড়িগ্রাম শহর ছেড়ে তিস্তার দিকে ফেরত চলে যায়। পরে তত্কালীন জেল ইনচার্জের স্ত্রী পরে জেলখানার তালা খুলে দিলে হাজতীরা বের হয়ে পালিয়ে যায়।
৮ এপ্রিল ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ কুড়িগ্রামে একটি বৈঠক করে নিজে সার্বিক দায়িত্বে থেকে রংপুরকে ১টি সেক্টর ঘোষণা দিয়ে দু’টি সাব সেক্টরে ভাগ করে দেন। এর একটির হেডকোয়ার্টার লালমরিহাটের পাটগ্রামে করে দায়িত্ব দেয়া হয় সুবেদার বোরহান উদ্দিনকে এবং অপর সেক্টরটির হেড কোয়ার্টার কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে করে সুবেদার আরব আলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এসময় ঢাকার কর্মস্থল থেকে ফিরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন আব্দুল হাই বীরপ্রতীক।
১৪ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পাক হানাদার বাহিনী কুড়িগ্রাম আক্রমণের চেষ্টা করে দখলে নিতে ব্যর্থ হয়। ফেরার পথে পাকবাহিনী সফর ডাক্তারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এসময় ডাঃ ছফর উদ্দিন, আব্দুল লতিফ, সাহাবুদ্দিনসহ কয়েকজনকে হত্যা করে টোগরাইহাটের বড়ব্রিজের পাশে ইটভাটায় আশ্রয় নেয়। রাতভর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে গুলি বিনিময়কালে সেই যুদ্ধে আমজাদ হোসেন, জয়নালসহ ৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
১৫ এপ্রিল সকালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে রেলপথ ধরে পাকবাহিনী তিস্তার দিকে পিছু হটে এবং রেললাইনের দু’ধারের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সেসময় মুক্তিবাহিনী কুড়িগ্রাম বাজারের কালিবাড়ি সংলগ্ন চিটাগাং ক্লথ স্টোরে অবস্থান করছিলো।
১৬ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অবস্থান সরিয়ে কুড়িগ্রাম শহরের পুরাতন ডাকঘরপাড়াস্থ নাহার ভিলায় স্থাপন করে এবং প্রতিরোধ চালিয়ে যায়।
২০ এপ্রিল ইপিআরদের নেতৃত্বে কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানীয় যুবকদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। পাকবাহিনী ভারি অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তিনদিক থেকে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্বল প্রতিরোধ ভেঙ্গে সন্ধ্যার দিকে কুড়িগ্রাম শহর দখল করে নেয়। এরপর মুক্তিবাহিনী ধরলা নদীর পূর্বপাড়ে প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তোলে।
২২ এপ্রিল ভোরবেলা প্রতিরক্ষার স্বার্থে মুক্তিযোদ্ধারা নাগেশ্বরীর রায়গঞ্জ ব্রিজটি ৩০০ গান কটন সেট করে উড়িয়ে দেয় এবং ধরলা নদীর পূর্বপাড়ে বিশাল এলাকা নিয়ে দৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তোলে।
২৪ এপ্রিল ভুরুঙ্গামারী থানা সদর এবং সোনাহাট হাইস্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়।
ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন রৌমারীতে সেনাবাহিনীর সুবেদার আলতাফ ১৪ এপ্রিল ১৭ জন জোয়ান নিয়ে যাদুর চরে এসে স্থানীয় যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আলতাফ বাহিনী গঠন করেন। সেই বাহিনীকে ৫ ভাগে বিভক্ত করা হয়। বাহাদুরাবাদ ঘাট, দেওয়ানগঞ্জ ও জামালপুর দিয়ে পাকহানাদার বাহিনীর আক্রমণ ঠেকাতে রাজিবপুরে অবস্থান নেয় হাবিলদার মনসুরের নেতৃত্বাধীন প্রথম দলটি। কোদালকাটিতে অবস্থান নেয় হাবিলদার রেজাউলের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দলটি। ছালিয়াপাড়ায় অবস্থান দেয় নায়েক মনসুরের (২) নেতৃত্বে তৃতীয় দলটি। চিলমারী রুটে পাকবাহিনীকে প্রতিহত করতে ঠাকুরের চরে মোজাহিদ কমান্ডার মফিজের নেতৃত্বে অবস্থান নেয় চতুর্থ দলটি। রৌমারী হেড কোয়ার্টার রাখেন সুবেদার আলতাফ নিজের নেতৃত্বাধীন পঞ্চম দলটিকে।
২৫ মে দুপুরে মুক্তিবাহিনী প্রধান জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী ও ক্যাপ্টেন নওয়াজীশ ভারতের সাহেবগঞ্জ থেকে জয়মনিরহাট ডাকবাংলোতে সুবেদার আরব আলীসহ অন্যদের সাথে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে ফিরে যান ভারতের কুচবিহারে। এদিনই পাকবাহিনী ধরলা নদী পাড়ি দিয়ে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী দখলে নেয়ার জন্য রাত থেকে প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়।
২৬ মে উত্তর ধরলায় প্রচন্ড আক্রমণ চালায় পাকবাহিনী। এসময় নাগেশ্বরী ও রায়গঞ্জ ঘাঁটি থেকে মুক্তিযোদ্ধারা সুবেদার বোরহানের নেতৃত্বে হালকা ও যত্সামান্য অস্ত্র নিয়ে কিছু ইপিআর সদস্যসহ ঘোগাদহ, পাটেশ্বরী ও পাঁচগাছি এলাকায় অবস্থান নেয় আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে।
২৭ মে ভারতের বিএসএফ এর কাছ থেকে গোলাবারুদ এবং সংগৃহীত খাবার নিয়ে একটি জীপ ও একটি ট্রাক ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ধরলা নদীর দিকে এগুতে থাকে। এসময় পাকবাহিনী ধরলা নদী পার হয়ে নাগেশ্বরীর দিকে এগিয়ে যাবার সময় চন্ডিপুর নামক স্থানে মুখোমুখি হলে জীপটি ঘুরে ফিরে যেতে পারলেও পেছনের মুক্তিযোদ্ধাবাহী ট্রাকটি পাকবাহিনীর ঘেরাওয়ে পড়ে যায়। পাকসেনাদের প্রচন্ড গোলাবর্ষণে ট্রাকটি উলটে রাস্তার পার্শ্বের গর্তে পড়ে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন ড্রাইভার রব্বানীসহ ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা। আহত অবস্থায় ধরা পড়েন আজীজ নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং বাকী দুজন রায়গঞ্জের মোটর সাইকেল মেকানিক ও ভুরুঙ্গামারীর আকালু আহত হয়ে পালিয়ে যান।
২৮ মে পাটেশ্বরীর পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আক্রমণ প্রতিহতের চেষ্টা চালালেও অস্ত্র ও গোলা-বারুদসহ সহায়তা না মেলায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন মুক্তিযোদ্ধারা। পাটেশ্বরীর প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সুবেদার বোরহান উদ্দিন যাত্রাপুরের দিকে সরে মাদারগঞ্জ হয়ে সোনাহাটে ফিরে যান। সুবেদার আরব আলী তার দলসহ পশ্চিম দিকে সরে ফুলবাড়ীতে এবং সি আর চৌধুরী তাঁর বিশেষ গেরিলা বাহিনী নিয়ে দুধকুমোর নদীর চর দিয়ে ভুরুঙ্গামারীতে আশ্রয় নেন।
এ অবস্থায় পাকবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে ২৭মে নাগেশ্বরী ও ২৮ মে ভুরুঙ্গামারী দখল করে নেয়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের দ্রুত ভারতের সাহেবগঞ্জ ও সোনাহাট এলাকায় সংঘবদ্ধ এবং পুনর্গঠিত করা হয়। সুবেদার বোরহান সোনাহাটে এবং সুবেদার আরব আলী, সুবেদার মোজহার, হাবিলদার আনিস মোল্লা, সুবেদার শামছুল হক, সুবেদার মোস্তফা, সুবেদার মালেক চৌধুরী, হাবিলদার মোকসেদ, নায়েক খলিল, নায়েক খালেক, সিরাজ, কোয়ার্টার মাস্টার রাজ্জাকসহ সকল ইপিআর সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা সাহেবগঞ্জে সমবেত হন। ক্যাপ্টেন নওয়াজীশের নেতৃত্বে সহেবগঞ্জে হেড কোয়ার্টার স্থাপন করে ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা বামনেরহাট, চৌধুরীহাট ও গীতালদহ এবং ফুলবাড়ীতে ঘাঁটি স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধারা শক্ত প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তুলে পাকবাহিনীর অবস্থানের উপর গেরিলা আক্রমণ চালাতে থাকে।
জুন মাসের দিকে ছাত্রলীগের কর্মীদের অংশগ্রহণে গঠিত বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বি.এল.এফ) কুড়িগ্রাম মহকুমার ৮টি থানা- ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, উলিপুর, চিলমারী ও রৌমারীর কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয় আখতারুজ্জামান মন্ডলকে। ভারতের গেরিলা কমান্ডো বিশেষজ্ঞ জেনারেল উবান বিএলএফ সদস্যদের বিশেষ ধরনের অস্ত্রসহ গেরিলা প্রশিক্ষণ দিয়ে আখতারুজ্জামান মন্ডল, শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর নেতৃত্বে এসব এলাকায় যুদ্ধ পরিচালিত হয়। জুলাই মাস জুড়ে চলে উল্লিখিত এলাকাগুলোতে যুদ্ধ।
এ সময় মুজিবনগর সরকার সমগ্র দেশকে এগারটি সেক্টরে ভাগ করলে ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী কুড়িগ্রাম সদর ও উলিপুরের কিছু অংশ ৬ নং সেক্টর এবং উলিপুর থানার বাকী অংশ নিয়ে চিলমারী ও রৌমারী ১১নং সেক্টরের অধীনে ভারতের মাইনকার চরে সাব সেক্টর পরিচালিত ছিল।
১লা আগস্ট রৌমারীর আলতাফ বাহিনী চিলমারী রেইড চালিয়ে পাকবাহিনীকে পরাজিত করে বালাবাড়ী পর্যন্ত দখলে নেয়।
৪ আগস্ট পাকবাহিনী নৌপথে তিনটি গানবোট ও দুটি লঞ্চ নিয়ে চিলমারী ঘাটে পৌঁছে পরবর্তীতে নদীপথে রৌমারীর ছালিপাড়া ও কোদালকাটি দখল করলেও বাকি অংশ ছিলো সম্পূর্ণ মুক্তাঞ্চল। ওই সেক্টরের আওতায় বীর প্রতীক তারামন বিবি সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
১লা আগস্ট সংঘটিত আন্ধারীঝাড় অপারেশনে ৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা এ্যামবুশ করে পাকবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনসহ ১১ জন সৈন্যকে হত্যা করে।
৫ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বামনহাট যুব শিবির প্রধান অধ্যাপক আব্দুল ওহাব তালুকদার দুইজন সঙ্গীসহ শিংঝাড় এলাকায় পাকবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে শহীদ হন।
৮ আগস্ট ভুরুঙ্গামারীর পুরাতন পাটেশ্বরীর সোনাহাট ব্রিজে পাকবাহিনীর প্রচন্ড আক্রমণে কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল কুদ্দুছ নানুসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা নদী পার হয়ে নিরাপদে গেলেও নুরুজ্জামানসহ দুইজন ধরা পড়েন। সেদিন সাহস আর বুদ্ধিমত্তায় নুরুজ্জামান পালিয়ে জীবন রক্ষা করতে পারলেও শহীদ হন মকবুল, আজীজসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা।
পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধারা কুড়িগ্রাম-উলিপুরের মধ্যবর্তী দুর্গাপুরের অর্জুনের ডারায় রেল ব্রিজে মাইন পেতে পাক সৈন্যবাহী ট্রেন উড়িয়ে দেয় এবং পঞ্চাশ-ষাটজনের একটি পাক সৈন্যদল দুটি বড় নৌকায় ফুলবাড়ী যাবার পথে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে ধরলা নদীতে সলিল সমাধি হয়।
আগস্ট মাসব্যাপী মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনী এবং এদেশীয় দালাল দোসরদের বিরুদ্ধে গেরিলা কায়দায় সম্মুখ যুদ্ধকে জোরদার করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ১ আগস্ট চিলমারী ও আন্ধারীঝাড় অপারেশন, ১৪ আগস্ট সোনাহাট ব্রীজে সম্মুখ যুদ্ধ, দুর্গাপুর অপারেশন, গাগলা অভিযান, পাঁচগাছিতে রাজাকার আটক অভিযান, রায়গঞ্জে অপারেশনসহ মুক্তিযোদ্ধাদের অসংখ্য আক্রমণের ঘটনা।
এসময় পাকবাহিনী কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন স্থানে বাঙালি নারীদের ধর্ষণ ও স্বাধীনতাকামী মানুষের নির্যাতন শিবির গড়ে তোলে। উলিপুরের হাতিয়া, কুড়িগ্রাম সদরের কাঁঠালবাড়ী ছিলো পাকবাহিনীর নৃশংসতম গণহত্যা।
১৩ নভেম্বর উলিপুরের হাতিয়ায় নিরীহ ঘুমন্ত মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি করে, পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে ৬৯৭ জন নারী-পুরুষ-শিশুকে।
অপরদিকে ১১, ১২ ও ১৩ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী, পরবর্তীতে ভারতীয় বিমান বাহিনী ও যৌথবাহিনী ভুরুঙ্গামারীতে অবস্থানরত পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ চালালে ১৪ নভেম্বর সকালে পিছু হটে নাগেশ্বরীর রায়গঞ্জে অবস্থান নেয়। ১৬ নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর যৌথবাহিনী আন্ধারীঝাড়ে অবস্থান নিয়ে রায়গঞ্জে অবস্থান নেয়া পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। ২০ নভেম্বর রাতে সম্মুখ যুদ্ধ চলাকালীন লে: সামাদ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন এবং যুদ্ধ চলতে থাকে। ২৩ নভেম্বর যৌথবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে পাকবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়লে সেদিনই রায়গঞ্জ দখলে নিয়ে লে: সামাদের লাশ উদ্ধার করে দাফন করা হয়।
পাকবাহিনীর সীমাহীন অত্যাচার ও যুদ্ধের ভয়াবহতায় মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিগেডিয়ার জসির নেতৃত্বেধীন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ষষ্ঠ মাউন্টেন্ড ডিভিশনের সহযোগিতায় পাকবাহিনীর উপর পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে ১৪ নভেম্বর ভুরুঙ্গামারী, ২৮ নভেম্বর নাগেশ্বরী এবং ৩০ নভেম্বর গোটা উত্তর ধরলা হানাদার মুক্ত করে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পাকবাহিনী পিছু হটে ধরলা নদী পার হয়ে কুড়িগ্রাম শহরে অবস্থান নিলে মুক্ত হয় উত্তর ধরলার সব এলাকা।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ভুরুঙ্গামারীর সিও অফিস, রায়গঞ্জ ব্রিজের ক্যাম্প, কুড়িগ্রাম শহরের রিভারভিউ হাইস্কুল ও সিএন্ডবি ডাকবাংলোয় পাকবাহিনী গড়ে তোলে নির্যাতন শিবির। এসময় বর্বরতার মুখে এ অঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ মানুষ ভারতে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়।
১লা ডিসেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী ধরলা নদী পাড়ি দিয়ে কুড়িগ্রাম শহরে অবস্থানরত পাকবাহিনীর উপর অব্যাহত গেরিলা হামলা চালানোর পাশাপাশি দুদিন চালানো হয় ভারতীয় বিমান হামলা।
৬ ডিসেম্বর খুব ভোরে উলিপুরে অবস্থানরত পাকবাহিনী পিছু হটে কুড়িগ্রাম আসলে আবারো চলে বিমান হামলা। বিকাল ৩টার দিকে পাকবাহিনী গুলি করতে করতে ট্রেনযোগে কুড়িগ্রাম শহর ছেড়ে রংপুরের দিকে চলে গেলে শত্রুমুক্ত হয়। ঐ দিনই কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল হাই সরকারের নেতৃত্বে ৩৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল শহরে প্রবেশ করে বিকেল ৪টায় নতুন শহরস্থ ওভারহেড পানির ট্যাংকের উপর স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে।
খেতাবপ্রাপ্ত বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধা
খেতাবপ্রাপ্ত বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধা
শহীদ লেঃ আবু মঈন মোঃ আসফাকুস সামাদ বীরউত্তম
জন্ম ঢাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রথম ব্যাচে লেঃ হন। একাত্তরে ভুরুঙ্গামারী নাগেশ্বরী রণাঙ্গনে অসংখ্য সামরিক অভিযানে নেতৃত্ব দেন। তিনি কুড়িগ্রাম জেলায় মুক্তিযুদ্ধে বীরউত্তম খেতাব পাওয়া একমাত্র শহীদ।
সৈয়দ মনসুর আলী টুংকু বীরবিক্রম
জন্ম আসাম। ভারত বিভক্তির পর কুড়িগ্রামে অগমন। বিমান বাহিনীর চাকরি ছেড়ে মুসলিম লীগে যোগ দেন। কুড়িগ্রামের মানুষের কাছে তিনি ”গরীবের বন্ধু টুংকু ভাই” হিসেবে পরিচিত।
শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম ঃ
জন্ম চিলমারী । মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জন্য বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত হন। মুক্তিযুদ্ধকালীন চিলমারী ও হাতিয়া অপারেশনে তিনি বীরত্বের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন।
তারামন বিবি বীরপ্রতীক
জন্ম রাজিবপুর। দরিদ্র গৃহবধূ তারামন মুক্তিযুদ্ধের সময় হয়ে ওঠেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা । মুক্তিযুদ্ধের সময় প্লাটুন কমান্ডার মুহিব হাবিলদার তারামন বিবিকে কাজের মেয়ে হিসেবে নিলেও পরে ধর্ম মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করেন। তাকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও গুপ্তচর বৃত্তির কাজ শেখান। যুদ্ধ ও গুপ্তচর বৃত্তি দুটোই নির্ভয়ে করেছেন তারামন।
মোঃ বদরুজ্জামান মিয়া বীরপ্রতীক
জন্ম ফুলবাড়ী। ৯ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পাকবহিনীর গোলাবষর্েণ পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। ‘৭১ মার্চে তাঁর নেতৃতেই ফুলবাড়ীতে সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নিয়ে একটি ইউনিট গঠন করেন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি শিরোনামে তাঁর রচিত একটি গ্রন্থ আছে।
আব্দুল হাই সরকার বীরপ্রতীক
জন্ম কুড়িগ্রাম। প্রথম ব্যাচে যে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা ভারত থেকে রণাঙ্গনে আসেন তাদের একজন আঃ হাই সরকার। তার নেতৃত্বে ৬ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহর পাকহানাদার মুক্ত হয়।